সংখ্যার রাজ্য (K1ngd0m 0f Num63r) - পার্ট ৩

 সংখ্যা কি? সংখ্যা হলো এক ধরনের চিহ্ন বিশেষ যা কোনো কিছুর পরিমাণ নির্দেশ করে এবং যা গণনার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতীক ব্যবহার করে সংখ্যা প্রকাশের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমনঃ দশমিক(decimal) সংখ্যা ব্যবস্থা, দ্বিমিক(binary) সংখ্যা ব্যবস্থা, অষ্টক(octal) সংখ্যা ব্যবস্থা ইত্যাদি। ‘দশ’ সংখ্যাটি বোঝাতে রোমানরা ‘X’ প্রতীকটি ব্যবহার করতো, বাংলা ভাষায় একে ‘১০’ এবং ইংরেজিতে ‘10’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আবার ‘10’ প্রতীকটি দ্বারা বাইনারী সংখ্যা ব্যবস্থায় এর মান বোঝায় 2(দুই);  সংখ্যার বিভিন্ন ধর্ম এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক খুজতে গিয়েই সংখ্যাতত্ত্বের উদ্ভব। সর্বপ্রথম সংখ্যাতত্ত্বের ধারণা দিয়েছিলেন পিথাগোরাস। সংখ্যার রয়েছে হরেক রকমের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য। সংখ্যার এই বৈচিত্র্য নিয়েই আজ বলছি তোমাদের। 


Lucas Number:

২, ১, ৩, ৪, ৭... ... এই সিরিজে সংখ্যাগুলোর মধ্যে একটা মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে। একটি সংখ্যার সঙ্গে আগের সংখ্যাটি যোগ করলে পরের সংখ্যাটি পাওয়া যায়। সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যায় এ ধরনের ক্রমিক ধারাকে লুকাস সংখ্যা বলে। ফরাসি গণিতবিদ ফ্রাঙ্ক এডওয়ার্ড আনাতোলে লুকাস (১৮৪২-১৮৯১) এ ধরনের সংখ্যা নিয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথম ধারণা দেন।


Natural Number (স্বাভাবিক সংখ্যা): 

ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যাগুলোই স্বাভাবিক সংখ্যা। যেমনঃ ১, ২, ৩... ... ইত্যাদি। ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার সেটকে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়।


Whole/Integer Number (পূর্ণ সংখ্যা): 

ভগ্নাংশ বা দশমিক সংখ্যা বাদে সকল মূলদ সংখ্যাই পূর্ণ সংখ্যা। পূর্ণ সংখ্যা দুই প্রকার। ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা ও ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা।


Positive Integer (ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা): 

শূন্য থেকে বড় সকল পূর্ণ সংখ্যাই ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা। একে Z+ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, Z+ = {1, 2, 3, ... ...};


Negative Integer (ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা): 

শূন্য থেকে ছোট সকল পূর্ণ সংখ্যাই ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা। একে Z- দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, Z- = {... ... -3, -2, -1};


Irrational Number (অমূলদ সংখ্যা): 

যে সকল বাস্তব সংখ্যাকে a/b আকারে বা দুইটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশ রূপে প্রকাশ করা যায় না, তাদেরকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়। এখানে, a ও b পূর্ণসংখ্যা এবং b এর মান অবশ্যই শূণ্য নয়। যেমন: বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত (Pi) একটি অমূলদ সংখ্যা। যদি কোন বৃত্তের ব্যাস মূলদ সংখ্যা হয় তবে তার পরিধি একটি অমূলদ সংখ্যা।

(Square root of 2) = 1.41421 35623 73095 04880 16887… … …; (Square root of 2) কে দুইটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশ রূপে প্রকাশ করা যায় না, (Square root of 2) এর মান যদি আমরা দশমিক ভগ্নাংশে লিখতে চাই তাহলে লেখার মত যথেষ্ট বড় খাতা কখনো পাওয়া যাবে না, কারণ এর মান দশমিক এর পর কখনো শেষ হবে না, চলতেই থাকবে। তার মানে প্রকৃত মানটা নির্দিষ্ট কিন্তু অনির্ণেয়। তাই একটি অমূলদ সংখ্যা।

অমূলদ সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে দশমিকের পরের সংখ্যাগুলো চলতেই থাকে, কখনো শেষ হয় না। আবার দশমিকের পরে একই সংখ্যার পুনরাবৃত্তিও ঘটে না অর্থাৎ অমূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে পৌনঃপুনিক গ্রহনযোগ্য নয়। অমূলদ সংখ্যাকে দশমিকে প্রকাশ করার চেষ্টা করলে দশমিকের পর যত ঘর অবধি-ই দেখা হবে, কোন পৌনঃপুনিকতা দেখা যাবেনা।

আরও কিছু অমূলদ সংখ্যার উদারহরণ দেখা যাক।


Rational Number(মূলদ সংখ্যা): 

যে সকল বাস্তব সংখ্যাকে a/b আকারে বা দুইটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশ রূপে প্রকাশ করা যায়, তাদেরকে মূলদ সংখ্যা বলা হয়। এখানে, a ও b পূর্ণসংখ্যা এবং b এর মান অবশ্যই শূণ্য নয়। যেমন: 12=24/2=36/3=48/4; অর্থাৎ 12 একটি মূলদ সংখ্যা।


Real Number (বাস্তব সংখ্যা): 

যে কোন মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যাই বাস্তব সংখ্যা। বাস্তব সংখ্যা ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। এটি ভগ্নাংশও হতে পারে। যেমনঃ


Transcendental Number: 

Transcendental বলতে বোঝায় ‘যা মানুষের সাধারণ বুদ্ধির বাইরে’; সংখ্যারেখায় যে সকল সংখ্যার সুনির্দিষ্ট অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব নয় তাকে Transcendental Number বা অবীজগণিতীয় সংখ্যা বলা হয়। যেমনঃ e, π অবীজগণিতীয় সংখ্যার উদাহরণ।


Palindromic Number (প্রতিসম সংখ্যা): 

Palindrome বলতে সেসব শব্দ, শব্দ সমষ্টি বা বাক্য বোঝায় যেগুলোকে সামনের দিক থেকে বা বিপরীত দিক থেকে পড়লে একই হয়। যেমন: madam, civic, radar, racecar ইত্যাদি। Palindromic সংখ্যাগুলোও একই রকম। অর্থাৎ যে সংখ্যাগুলোকে ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানে পড়লে একই হয় সেগুলোকে প্রতিসম সংখ্যা বলা হয়। যেমন: ১, ৯, ২২, ১২১, ৪৪৪৪, ৫২৭২৫, ৩৬৭৮৯৮৭৬৩ ইত্যাদি।

একটি অপ্রতিসম সংখ্যার অংকগুলোকে এর বিপরীতক্রমে সাজিয়ে পাওয়া সংখ্যাটিকে উক্ত সংখ্যার সাথে যোগ করে প্রতিসম সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। এই পদ্ধতিটি Lychrel process নামে পরিচিত। যেমন: ৫০৬৩ সংখ্যাটি দিয়ে শুরু করা যাক। এই সংখ্যাটির অংকগুলোকে এর বিপরীতক্রমে সাজিয়ে পাওয়া সংখ্যাটিকে উক্ত সংখ্যার সাথে যোগ করব। যোগফলটিকে আবার তার বিপরীতক্রমে পাওয়া সংখ্যাটির সাথে যোগ করব। এভাবে যেতে থাকলে একপর্যায়ে তা প্রতিসম সংখ্যায় পরিণত হবে।

৫০৬৩ + ৩৬০৫ = ৮৬৬৮, প্রথম ধাপেই প্রতিসম হয়ে গেল।

আরেকটি উদাহরন দেখা যাক। এবারে নিলাম ১৯৭১।

১৯৭১ + ১৭৯১ = ৩৭৬২

৩৭৬২ + ২৬৭৩ = ৬৪৩৫

৬৪৩৫ +৫৩৪৬ = ১১৭৮১

১১৭৮১ + ১৮৭১১ = ৩০৪৯২

৩০৪৯২ + ২৯৪০৩ = ৫৯৮৯৫, পাঁচ ধাপ পর প্যালিন্ড্রোমিক পাওয়া গেলো।


Lychrel Number: 

যে সকল অপ্রতিসম সংখ্যাকে Lychrel process এর মাধ্যমে প্রতিসম সংখ্যায় রূপান্তর করা যায় না, তাদেরক Lychrel Number বলে। এখন পর্যন্ত একটিমাত্র Lychrel Number এর সন্ধান পাওয়া গেছে। সংখ্যাটি হলো ১৯৬; এই সংখ্যাটিকে Lychrel process এর মাধ্যমে ৭০০,০০০,০০০ বার পুনরাবৃত্তি পদ্ধতিতে যোগ করেও এর প্রতিসম সংখ্যা পাওয়া যায় নি।


Palindromic Prime Number (প্রতিসম মৌলিক সংখ্যা): 

যে সকল প্রতিসম সংখ্যা মৌলিক হয় তাদেরকে প্রতিসম মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমনঃ ১০১, ১৩১ ইত্যাদি।


Palindromic Square Number (প্রতিসম বর্গ সংখ্যা): 

যে সকল প্রতিসম সংখ্যা পূর্ণ বর্গ সংখ্যা হয় তাদেরকে প্রতিসম বর্গ সংখ্যা বলে। যেমনঃ ১২১, ৪৮৪, ১০২০১ ইত্যাদি।


Unique number (অদ্বিতীয় সংখ্যা): 

শুধুমাত্র ক্রমিক অংক বিশিষ্ট কোনো একটি সংখ্যা এবং তার উল্টো সংখ্যাটির ব্যবধানই হচ্ছে Unique number। একটি উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে বিষয়টি।

দুইটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট একটি সংখ্যা ৪৫; এবার ৪৫-কে উলটে লিখলে পাওয়া যাবে ৫৪; এখন (৫৪-৪৫) = ৯।

দুইটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট যে কোনো সংখ্যার জন্যই ৯ হচ্ছে Unique number, কারণ দুইটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট যে কোনো সংখ্যার ব্যবধানই হবে এই ৯; আরেকটা উদাহরণ দেখলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।

দুইটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট একটি সংখ্যা ৮৯; এবার ৮৯-কে উল্টো করে লিখলে পাওয়া যাবে ৯৮; এখন (৯৮-৮৯) = ৯।

দুইটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে Unique number যে ৯ সেটা আমরা বুঝে পেলাম, কিন্তু তিনটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রেও কি এরকম Unique number রয়েছে? চলুন দেখি তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নাকি।

তিনটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট যেকোনো একটি সংখ্যা ১২৩; এবার ১২৩-কে উল্টো করে লিখলে পাওয়া যাবে ৩২১; এখন (৩২১-১২৩) = ১৯৮।

আরেকটি সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষাটি করে দেখি ১৯৮ই পাওয়া যায় কিনা। তিনটি ক্রমিক অংক যেকোনো একটি সংখ্যা ৬৭৮; এবার ৬৭৮-কে উলটে লিখলে পাওয়া যাবে ৮৭৬; এখন (৮৭৬-৬৭৮) = ১৯৮; বাহ! চমৎকার, এখানেও ১৯৮ পাওয়া গেলো। তাহলে আমরা বলতে পারি তিনটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে Unique number হচ্ছে ১৯৮।

এখন তোমাদের জন্য প্রশ্নঃ তোমরা কি বের করতে পারবে, চারটি ক্রমিক অংক বিশিষ্ট সংখ্যাগুলোর জন্য Unique number কত?


Taxicab Number (হার্ডি-রামানুজান সংখ্যা): 

হার্ডির সাথে কাজ করার সময় রামানুজন একবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান হার্ডি। কিন্তু ঢেকি তো স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর হার্ডি তো গেছে কেবল হাসপাতালে। কী জিজ্ঞেস করবেন ব্যাটা তোর শরীর কেমন, কী খাবি এইসব- তার বালাই নেই, গিয়েই বলে বসলেন, “আজকে আমি যে ট্যাক্সিতে করে আসলাম তার সংখ্যাটা বেশ বেরসিক, ১৭২৯; এর এমন কোন আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য নাই।”

আমাদের রামানুজন দাদা আরেক কাঠি সরেস, কী একটু সুস্থ হবার কথা ভাববেন, ভাল-মন্দ খাওয়া-দাওয়া করবেন, তা না কেবল সংখ্যা নিয়ে মাতামাতি। বলে বসলেন, “আরে বলেন কি!! এর মত সংখ্যা আর একটি পাবেন না। এটি হল সেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যা যাকে দুই ভাবে দুটি সংখ্যার ঘনের যোগফল আকারে প্রকাশ করা যায়: ১৭২৯ = ১^৩ + ১২^৩ = ৯^৩ + ১০^৩;

১৭২৯ কে Taxicab Number বলা হয়।  


আরও অনেক সংখ্যা আছে যা আজকে আলোচনা করা সম্ভব হল না। পরের পার্টে আমরা বাকি সংখ্যা নিয়ে জানবো। 


তথ্যসুত্রঃ

  1. en.wikipedia.org
  2. প্রথম আলো গণিত ইসকুল
  3. গণিতকোষ-সফিক ইসলাম
  4. প্রকাশসত্ত্বঃ পাই-জিরো টু ইনফিনিটি, ডিসেম্বর'১৩ সংখ্যা। 

Comments

Popular posts from this blog

কাল বৈশাখে বজ্রপাতঃ বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু থেকে রক্ষাপেতে সতর্কতার বিকল্প নাই

Shortcut Virus কিভাবে রিমুভ করবো ????

বজ্রপাত কি? কি ভাবে এর সৃষ্টি হয়?